সাম্প্রতিক সময়ে আটতলা বিশিষ্ট আকাশছোঁয়া ভবন নির্মাণ হয়েছে ঠিকই, তবে যেখানে ৫৯ জন ডাক্তার থাকার কথা সেখানে মাত্র ১৫ জন ডাক্তার জোড়াতালি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম। আর নার্স, আয়া, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর বেশিরভাগ পদও শূন্য হাসপাতালটিতে।
কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রান্তিক জেলা হওয়ায় ডাক্তাররা এখানে এসে থাকতে চান না। বদলির আদেশ তামিল হওয়ার আগেই তদবির করে সেটা স্থগিত করে দেন অনেকেই। ফলে শূন্য হাসপাতাল শূন্যই থেকে যায়। এদিকে, ‘নাই’ এর আছর কাটাতে স্থানীয় ও আশপাশের জেলা থেকে ডাক্তার নিয়োগে দেওয়ার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে রয়েছে মেডিসিন, সার্জারি, গাইনি, শিশু, নবজাতক, ডায়রিয়া ও ডায়ালাইসিস ওয়ার্ড। সবগুলো বিভাগ চালাতে ৫৯ জন ডাক্তারের পদ রয়েছে। তার মধ্যে ১০ জন বিশেষজ্ঞ, একজন আবাসিক চিকিৎসক ও দুইজন মেডিকেল অফিসার মিলিয়ে হাসপাতালটিতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৫ জন ডাক্তার।
উল্লেখ্য, ৩৯তম বিসিএস উত্তীর্ণ ১২ জন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা বিশেষায়িত করোনা ইউনিটে কর্মরত রয়েছেন।
এদিকে, ২২৩ জন নার্সের মঞ্জুরিকৃত পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ১৪০ জন। আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়াধীন থাকায় মাত্র চারজন কর্মরত আছেন এখন।
সূত্র জানায়, সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চার জন ডাক্তারের সবগুলো পদই এখন শূন্য। প্রেষণে ডাক্তার এনে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে জরুরি বিভাগ। রোগীদের সেবা দিতে সরকার দুটি মূল্যবান এক্স-রে মেশিন দিলেও রেডিওলজিস্ট ও রেডিওগ্রাফার না থাকায় টানা চার বছর ধরে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
জানা যায়, কার্ডিওলজিস্ট ডা. মোহাম্মদ হোসেন ছুটি নিয়ে গত এক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় হৃদরোগের যাবতীয় চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে। ফলে ৬৭ কিলোমিটার দূরের গন্তব্য সিলেটে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের।
হাসপাতালের সার্বিক অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন ডাক্তার বলেন, লিখে কী হবে। গত ৫ বছর ধরে দেখে আসছি জনবল সংকট নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা লিখছেন, আমরাও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত বিরতিতে রিপোর্ট করছি; পরিবর্তন তো কিছুই হচ্ছে না। তাঁর মতে, প্রান্তিক জেলা হওয়ায় এখানে এসে ভাল কোন ডাক্তার থাকতেই চান না। অনেকই মাঝপথে বদলির আদেশ স্থগিত করে দিয়ে পুরনো কর্মস্থলে থেকে যান। কেউ কেউ নানা বাহানায় ছুটি নিয়ে বছরের পর বছর কাটিয়ে দেন। তাঁর মতে, সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের শনির দশা কাটাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি বিশেষ নজর দেন তবেই এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও জনবল সংকট দূরীকরণে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি, আমাদের জায়গা থেকে এর বেশি কিছু করার নেই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সদর আসনের সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহও এ নিয়ে সংসদে একাধিকবার কথা বলেছেন। পরিস্থিতির সাময়িক উন্নতি হলেও দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না।
এমন নেতিবাচক পরিস্থিতির মাঝেও কিছুটা আশার কথা শোনালেন ডা. রফিক। তিনি বলেন, এখন আমাদের অপারেশন থিয়েটারটি সার্বক্ষণিক সচল রয়েছে। ছোটবড় সব ধরনের অপারেশন হয় এখানে। মাসে অন্তত ৩০ টি সিজারিয়ান অপারেশনও হচ্ছে।
সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন বলেন, জনবলের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর – সবখানেই আমরা লিখছি। এই বিষয়টি সম্পূর্ণ তাদের এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে।
0 coment rios: