উজানের নৌকা ভাটিতে : আরিফ মাহফুজ |Sunamganj Live|সুনামগঞ্জ লাইভ
নিরপেক্ষ দৃষ্টি ভঙ্গিতে রাজনৈতিক সমীকরণ বিশ্ল্লেষণের অধিকার সবারই আছে। দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক চর্চাকে পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক গবেষকরা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর পটভূমি হিসাবে উল্লেখ করেন স্থানীয় রাজনীতিকে। যার সমীকরণ মিনিটে মিনিটে পরিবর্তন হয়। তবে জাতীয় রাজনীতির ভিত কিন্তু প্রকট ভাবে নির্ভর করে স্থানীয় বা তৃণমূল রাজনীতির উপর। স্থানীয় বা তৃণমূল রাজনীতি হলো জাতীয় রাজনীতির মেরুদন্ড।প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তৃণমূলের উপর নির্ভরশীল বলেই সব সময় তৃণমূলকে সংগঠিত করার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরত্ব প্রদানের মাধ্যমে সময় ব্যয় করা হয় ।
আবার দলীয় কট্টর নেতাদেরও খুব গুরুত্ব দেয়া হয় এবং এটাই উচিত। কর্মী থেকে তিলে তিলে নেতা হওয়া নেতাদের সঠিক মূল্যায়ন করা প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের নীতি গত বৈশিষ্ট। কিন্তু হঠাৎ কিছু ব্যাতিক্রম ঘটনা লক্ষ্য করা যায় যা থেকে রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে মহা সংকটে কিংবা চিন্তায় পরে যান রাজনৈতিক বিশ্ল্লেষকরা বা সুশীল সমাজের চিন্তাবিদরা। এরকম বিষয় যে কোন রাজনৈতিক দলেই ঘটুকনা কেন। সম্প্র্রতি জামালগঞ্জ উপজেলার উপনর্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের প্রাথী নির্বাচনে অত্যন্ত নাটকীয় পটভুমির জন্ম হয়ে গেলো। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে গত ১৮ই সেপ্টেম্বর জামালগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ এর তৃণমূল পর্যায়ে একটি ভোটাভোটি হয়ে গেলো -যেখানে ৬১টি ভোট আর মধ্যে ৫৭টি ভোট পেয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী রেজাউল করিম শামীম। রেজাউল করিম শামীমের তৃণমূল নির্বাচনের রায় পরিষ্কার করে দিয়েছিলো যে তিনিই দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন বা তিনিই যোগ্য প্রার্থী। কিন্তু বেলা শেষে বদলে গেলো দৃশ্যপট -ট্রেলার যেরকম ছিল ফুল মুভি উল্টো। দল থেকে মনোনয়ন পেলেন তৃণমূল নির্বাচনে ৪ ভোট পাওয়া ইকবাল আল আজাদ। তার মানে রাজনীতির বা রাজনৈতিক দলের ট্রেলার আর ফুল মুভি এক হয় না। এবার আসা যাক মূল বিশ্ল্লেষণে -ইকবাল আল আজাদের মনোনয়ন পাওয়াকে সবারই স্বাগতম ও অভিনন্দন জানানো উচিত -দলের সবাই ও উপজেলাবাসী সবাই তাঁর জন্য শুভ কামনা করছে -এটাই স্বাভাবিক। সে তাঁর চেষ্টার মাধ্যমে অর্জন করেছে। এখন কথা হলো মনোনয়ন প্রদান কারীরা প্রাথী নির্বাচনে কি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ? নাকি স্বজন প্রিয়তায় গা ভাসিয়ে প্রাথী দিয়েছেন। নিরপেক্ষতায় থাকলে দৃষ্টি প্রক্ষেপন কি বলে ? মনোনয়ন পাওয়ার কথা ছিলো রেজাউল করিম শামীম -কিন্তু কেন তিনি পাননি ? তাহলে কি পূর্বের বিরাগভাজন কারীরাই কল কাঠি নেড়েছেন ? যদি তাই হয় তাহলে সারাজীবন একই দলে রাজনীতি করে জীবন পার করে লাভ কি ? বর্ষীয়ান খেতাব লাগানোর দরকার কি ? রেজাউল করিম শামীম একজন কট্টর পন্থী আওয়ামীলীগার। দল ত্যাগ দল পরিবর্তন করতে তাঁকে দেখা যায়নি কখনো। তিনি একনিষ্ঠ একজন আওয়ামীলীগার।গত উপজেলা নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েও তিনি মনোনয়ন পাননি , পরে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করেন। যদিও গবেষকদের মতে গত উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তাঁর নির্বাচন করা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিলোনা। গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়াটাই আজকের প্রেক্ষাপটের জন্য দায়ী।
তাছাড়াও স্থানীয় অনেক বিষয়ে জড়িত হওয়া নিয়ে রেজাউল করিম শামীমকে নিয়ে নেগেটিভ গুঞ্জন রয়েছে যা বর্তমান প্রেক্ষাপট সৃষ্টির পিছনে কাজ করেছে। তবে ছোট থেকে বড় বেশিরভাগ রাজনৈতিক নেতাদেরই নেগেটিভ গুঞ্জন থাকে। তাই বলে একজন বর্ষীয়ান নেতাকে মূল্যায়নের বাহিরে ফেলে দেয়া কোনো রাজনৈতিক দলেরই উচিত না বা কাম্য নয় । এরকমই যদি হয় তাহলে মানুষ প্রকৃত রাজ নীতি থেকে সরে যাবে। নতুন প্রজন্ম ধরে নিবে নেতৃত্বে আসার জন্য রাজনীতির দরকার নেই -টাকা আর লবিং থাকলেই জনপ্রতিনিধি হওয়া যায় -যে দুটি জিনিস থাকলে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সময়সীমার কোনোটারই দরকার নেই সে দুটি জিনিসই দরকার। নতুন
প্রজন্ম যাতে রাজনীতি বিমুখ না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রেখে প্রত্যেক দল কে তৃণমূলকে মূল্যায়ন করে -তৃণমূলের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। তৃণমূলের মূল্যায়নকে অবজ্ঞা করে উজানের নৌকা ভাটিতে দিলে রাজনীতির উপর মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলবে।সেটা যে কোনো দলই হউক না কেন। সবশেষে , সব প্রার্থীর জন্য শুভ কামনা করছি , যেন সরকারী প্রভাব মুক্ত একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় সেই প্রত্যাশায় ।
লেখক : আরিফ মাহফুজ , সাংবাদিক-কলামিস্ট।
0 coment rios: