Saturday, 26 September 2020

ছাত্রলীগের হাতে বিগত ১১ বছরে খুন ৩৬ মেধাবী ছাত্র|Sunamganj Live|সুনামগঞ্জ লাইভ


স্বাধীনতার পর দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হত্যার রাজনীতি চালু করে আওয়ামী ছাত্রলীগ। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটায় ছাত্রলীগ। তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা শফিউল আলম প্রধান সূর্যসেন হল থেকে ধরে এনে মুহসীন হলে ৭ জন ছাত্রকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। সেই থেকে শুরু যার শেষ বলি হলো বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফরহাদ। ১৯৭৪ থেকে ২০১৯ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের হাতে হত্যার শিকার হয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যাকান্ড তারই ধারাবাহিকতা। নাগরিক সমাজের সময়ের দাবি ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গত ১০ বছরে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খুন হয়েছেন ৩৩ জন মেধাবী ছাত্র। ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের আধিপত্য বিস্তার, সিট দখল, হল দখল নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি মূলত এসব হত্যাকান্ডের প্রধান কারণ।
ফেসবুকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তির প্রতিবাদে নিজের মত জানানোর কারণে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় এখন তোলাপাড় আন্তর্জাতিক মহলসহ সারাদেশ। বর্বরোচিত এ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন লাখো কোটি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী। যে স্ট্যাটাসের জেরে তাকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েটের একই হলের বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। প্রতিটি হত্যাকান্ডের ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রথা মেনে তদন্ত কমিটি করেছিল। থানাতেও মামলা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক ডামাডোলে হারিয়ে গেছে এসব মামলা। তাই বিচারের অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের আহাজারি কখনোই শেষ হয় না।
গণমাধ্যমে বেরিয়ে আসা সেসব হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো জড়ো করে দেখা যায়, গত ১০ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), বুয়েট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ (চবি) দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে লাশ হয়েছেন ৩৩ জন শিক্ষার্থী। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও জেলা কমিটিগুলোতে ছয় বছরে ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে বা অন্য সংগঠনের সঙ্গে অন্তত পাঁচ শতাধিক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। এতে শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিহত হয়েছেন ৩৩ জন। এদের মধ্যে নিজ সংগঠনের ১৬ আর বাকিরা প্রতিপক্ষ সংগঠনের নেতাকর্মী কিংবা সাধারণ শিক্ষার্থী, রয়েছে ১০ বছরের শিশু রাব্বীও। দেখা গেছে, এসব হত্যাকান্ডের অধিকাংশের বিচার হয়নি। সরকার ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে বিচার কার্যক্রম মুখথুবড়ে পড়েছে বলে মনে করেন নিহতদের আত্মীয়-স্বজনরা। বিচার না হওয়ায় অব্যাহতভাবে চলছে একের পর এক হত্যাকান্ড। ২০১২ সালে জবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে নিহত বিশ্বজিৎ দাসের বড় ভাই উত্তম দাস গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাগুলোর সঠিক বিচার হলে অনেকাংশে সংঘর্ষ কমে আসত। আমরা এই রায় কার্যকর দেখতে চাই।
ঢামেক থেকে শুরু : ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিজেদের সংঘর্ষে প্রথম হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে ওই বছরের ৩০ মার্চ। নিহত হন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আসাদ ওরফে রাজীব। এ হত্যার মধ্য দিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্য রূপ লাভ করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলই এ হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী। ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নির্মমভাবে খুন হন মেধাবী ছাত্র আবু বকর। এ হত্যা মামলায় সব আসামি ছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারির রাতে চট্টগ্রামের ষোল শহর রেলস্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মহিউদ্দিন কায়সারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার জন্য ছাত্রলীগ ও শিবির একে অপরকে দায়ী করে। পরে মহিউদ্দিনকে নিজেদের কর্মী দাবি করে চবি ছাত্রলীগ ও শিবির উভয় দলই। ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শাহ আমানত হল ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন নিহত হন। ২০১০ সালের ২৮ মার্চ রাতে শাটল ট্রেনে করে চট্টগ্রাম শহর হতে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে চবি মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র হারুন অর রশীদকে গলাকেটে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ২০১০ সালের ১৫ এপ্রিল চবি ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জোবরা গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে অ্যাকাউন্টিং দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী আসাদুজ্জামান নিহত হন। ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে দফায় দফায় গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় মুজাহিদ ও মাসুদ বিন হাবিব নামের দুই শিবির কর্মী নিহত হয়েছেন। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রলীগ কর্মী তাপস সরকার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চবির ২নং গেট সংলগ্ন নিজ বাসায় খুন হন ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ। এ হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত আসামিরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মী।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন রাবির শিবিরের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান নোমানী। পরের বছর ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল দখলকে কেন্দ্র করে শিবির-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ কর্মী ও গণিত বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ফারুক হোসেন। ২০১০ সালের ১৫ আগস্ট শোক দিবসে টোকেন ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে শাহ মখদুম হলের দোতলার ছাদ থেকে ছাত্রলীগ কর্মী নাসিরুল্লাহ নাসিমকে ফেলে হত্যা করে ছাত্রলীগ সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা। ২০১২ সালের ১৫ জুলাই রাতে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মাঝে গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী আবদুল্লাহ আল হাসান ওরফে সোহেল। পদ্মা সেতুর চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের এই আভ্যন্তরীণ কোন্দল লাগে বলে রিপোর্টে প্রকাশ। ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের বলি হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রস্তুম আলী আকন্দ। ২০১৪ সালের ৪ এপ্রিল নিজ কক্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
ময়মনসিংহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়: কোনো শিক্ষার্থী নয় বাকৃবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের গোলাগুলীতে বলি হন ১০ বছরের শিশু রাব্বি। ২০১৩ সালের ১৯ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকান্ড ঘটে। ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ নিজ দলের নেতাকর্মী হাতেই প্রাণ হারান আশরাফুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সায়াদ ইবনে মমাজ। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এ হত্যাকান্ড ঘটে বলে সে সময় জাতীয় সব গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: এ হত্যাকান্ডের ছবি ও ভিডিও প্রকাশের পর সারা দেশ প্রকম্পিত হয়। শিবির সন্দেহে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে দর্জি দোকানি বিশ্বজিৎ দাসকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ১৮ দলের অবরোধ কর্মসূচির দিনে এ নির্মম হত্যাকান্ড ঘটে। এ ঘটনায় আটজনের মৃত্যুদন্ড ও ১৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডের রায় হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত দুজন ও যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ১১ জনই ‘পলাতক’ রয়েছেন।
ছাত্রলীগের আভ্যন্তরীণ কোন্দলে ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি ছাত্রলীগের মধ্যে অন্তর্কলহের জেরে এক হামলায় গুরতর আহত হন জাবির ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ হত্যাকান্ডের পর ক্যাম্পাসে তীব্র আন্দোলনের মুখে তৎকালীন জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: ২০১২ সালের ৯ জুন সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি ফাহিম মাহফুজ বিপুল। ২০১৫ সালের ১৬ এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালইয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা পড়েন হাবিপ্রবির বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জাকারিয়া ও কৃষি বিভাগের ছাত্র মাহমুদুল হাসান মিল্টন।
২০১২ সালের ১২ মার্চ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল আজিজ খান সজীব খুন হন।
২০১৪ সালের ১৪ জুলাই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে প্রকাশ্যে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদ খুন হন।
২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারান ছাত্রলীগ কর্মী ও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সুমন দাস।
বিভিন্ন কলেজে আরও ১১ খুন : ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ বছরের ৪ জুন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের আবু সিনা ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন কলেজ ছাত্রদলের আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক ও কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাওহীদ ইসলাম। পরে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। চলতি বছর প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হন সিলেটের মদনমোহন কলেজের ছাত্র সোহান। ২৭ জুলাই সিলেটের পাঠানটুলায় গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও মহানগর ছাত্রদল নেতা জিল্লুল হক জিলু নিজ দলের কর্মীদের হামলায় নিহত হন। ২০১৩ সালের ২৯ নভেম্বর রাতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে আসাদুজ্জামান ফারুক নামে কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের শেষ বর্ষের এক ছাত্র মারা যান। সিলেট এমসি কলেজে ২০১২ সালের ১৬ জুলাই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল হাসান। ২০১১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও পলিটেকনিকে ফাও খাওয়া নিয়ে সংঘর্ষে রাইসুল ইসলাম রাসেল নামে এক শিক্ষার্থী মারা যান। ১৯ অক্টোবর ছাত্রদল কর্মীদের হাতে খুন হন মদনমোহন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী আল মামুন শিহাব। ২০ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে আবিদুর রহমান নামের এক ছাত্রলীগ কর্মী হত্যার শিকার হন নিজ সংগঠনেরই কর্মীদের হাতে। ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রমৈত্রীর সহ-সভাপতি রেজানুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ২১ জানুয়ারি পাবনা টেক্সটাইল কলেজের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা কামাল শান্তকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে যুবলীগ কর্মীরা। একই বছর ১২ জুলাই ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বলি হন সিলেট এমসি কলেজের গণিত বিভাগের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী উদয়েন্দু সিংহ পলাশ।
সাধারণও বাদ পড়েনি: ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে মারা গেছেন নিরীহ মানুষ ও শিক্ষার্থী। বাদ পড়েনি শিশুও। ২০১৩ সালের ২৪ জুন চট্টগ্রামে রেলের দরপত্র জমা দেওয়া নিয়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগের মধ্যে গোলাগুলিতে আট বছরের শিশু আরমান হোসেন ও ২৫ বছরের যুবক সাজু পালিত মারা যান। একই বছরের ১৯ জানুয়ারি আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি, পূর্বশত্রুতার জের ধরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারিতে নিহত হয় শিশু রাব্বী। গত ১৪ ই জুন ২০২০ রবিবার 
পাবনার চাটমোহরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে প্রতিপক্ষের অস্ত্রাঘাতে হাবিবুর রহমান হাবিব (২২) নামের এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খুন হয়েছেন

বিশিষ্টজনরা বলেছেন, দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজ ধ্বংসের ধারপ্রান্তে। নেই সুষ্ঠুধারার ছাত্র রাজনীতি, আছে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের একক আধিপত্য। যার ফলে এ সব ঘটনা ঘটছে। এটা দেশের জন্য অশনি সঙ্কেত বয়ে আনবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সুকমল বড়–য়া গণমাধ্যমকে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের কোন্দল, হল দখলের রাজনীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির কারণে এসব ঘটনা ঘটছে। এর পরিবর্তন আবশ্যক। নইলে দেশের জন্য অশনি সঙ্কেত বয়ে আনবে। সব ছাত্র সংগঠনের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠুধারার রাজনীতি চালু করলে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি আমার এই বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে দেখিনি, একটি হত্যাকান্ডের ঘটনার বিচার হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক নাট্যকার মলয় ভৌমিক বলেন, আমি আমার ৩৫-৩৬ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, একটি হত্যাকান্ডেরও বিচার হয়নি। ঠিকমতো বিচার চাওয়াও হয়নি, বরং লাশের রাজনীতি হয়েছে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ঘটনা ঘটেছে।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: