নির্বাক আর কিংকর্তব্য বিমূঢ় অবস্থায় কাটছে দিনগুলো। প্রশ্ন জাগে এটাই কি আমার দেশ ? এটাই কি আমার জন্মভূমি ? প্রতিদিনই ফেইসবুক ওয়ালে পোষ্ট দিতে চাই কিন্তু পারি না। ফেইসবুক এর পোষ্ট অপশন জিজ্ঞেস করে 'হোয়াটস ইন ইওর মাইন্ড ' -তাকে বলি আমার মাইন্ডে তো অনেক কিছুই আছে কিন্তু তুমার বক্সে লিখতে পারিনা , লিখলে অনেকেই মাইন্ড করবে। সব কি আর লিখা যায় ? না যায় না , কিছু ধূসর রয়ে গেছে সমাজে যাদের জন্য কলমও অনেক সময় থমকে যায়। লিখতে গিয়েও লিখিনা। সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রচন্ড ভাবে দংশন করে প্রতিনিয়ত। বাধ্য করে দেয় কলম ধরতে। একের পর এক গণধর্ষনের মত ন্যাক্কার জনক ঘটনা ঘটছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। নারীর প্রতি কেন এই সহিংসতা ? ধর্ষনের রঙ্গ মঞ্চ আজকের বাংলাদেশ। ধর্ষনের হিড়িক যা ইতি পূর্বে কখনোই দেখা যাই না শুধু ১৯৭১ সাল ব্যাতীত। ১৯৭১ সালে ধর্ষন করেছে পাকিস্তানি সেনারা আর সাথে ছিল গাদ্দার কিছু পিচাশ অমানুষ যাদেরকে আমরা রাজাকার বলি। রাজাকের বিচারও এদেশে হয়েছে দলীয়করনের মধ্যেদিয়ে। যাই হউক সেদিকে গিয়ে লাভ নেই। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি (বিএনডব্লিউএলএ) সম্মীক্ষা মতে শুধু চলতি বছরের ধর্ষনের হিসাব দেখেই মস্তিস্ক হ্যাং হয়ে যায়। চলতি বছরে গত আট মাসে সারা দেশে ৮৯২ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ১৯২ টি ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। ৪১ জন ধর্ষণের পরে আহত অবস্থায় মারা গেছেন, ৯ জন ধর্ষণের পরে আত্মহত্যা করে মারা গেছেন বলে জানা গেছে। ধর্ষন ছাড়াও নারী নির্যাতনের হিসাব অগনিত। স্কুল ছাত্রী , গৃহবধূ এমনকি ৭৫ বছরে বৃদ্ধাও এর বাহিরে নয়। ধর্ষনের আইনগত বিচার সঠিক সময়ে না হওয়ার কারনেই ঘটনার পরিসংখ্যান দিনদিন বাড়ছে। দেশের আইন অনুযায়ী ধর্ষন মামলার বিচার ১৮০ দিনের মধ্যে হতে হবে কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। ধর্ষনের বিচার ত্বরান্বিত করার জন্য নারীবাদী নেত্রীদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বর্তমানে ঘটেযাওয়া ধর্ষনের প্রতিবাদে সারা দেশের স্কুল-কলেজ - বিশ্বাবিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী সহ সাধারণ মানুষ আজ রাস্তায় নেমেছে। কিন্তু নারীবাদী নেত্রীরা চুপ করে লুকিয়ে আছেন। কিন্তু কেন ? কার ভয়ে বা কার সমর্থনে তাঁরা নিশ্চুপ এটা আজ দেশের মানুষের কাছে প্রধান প্রশ্ন। তাহলে আজ যারা বেপরোয়া ধর্ষক তাদের সাপোর্ট করতে কি তাঁরা আজ নীরব ? সবগুলো ধর্ষনের নায়ক আজকের ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা। পেছনে রয়েছে আওয়ামী গড ফাদাররা। সাতক্ষীরা থেকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীকে রক্ত জোগাড় করে দেওয়ার কথা বলে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ, মেসের রুমের টাইলস পরিষ্কার করার কথা বলে কেরানীগঞ্জে নারীকে ধর্ষণ, খাগড়াছড়িতে ডাকাতি করতে ঘরে ঢুকে এক প্রতিবন্ধী তরুণীকে দলবেঁধে ধর্ষণ, খাগড়াছড়িতে চাকমা সম্প্রদায়ের এক নারীকে ধর্ষন , সিলেটের এমসি কলেজে গণধর্ষন , নোয়াখালীর আলোচিত ধর্ষণ সহ সবগুলো ধর্ষনেই ছাত্রলীগ কর্মীরা অভিযুক্ত। সরকারের মদদেই আজ বেপরোয়া ছাত্রলীগ-যুবলীগ। লাগামহীন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়ে কারি কারী টাকা আয় করে বেসামাল তাঁরা। ক্ষমতা আর টাকার গরমে দিশেহারা। তাঁরা না মানে প্রশাসন না মানছে পারিবারিক আদর্শ। বেশিরভাগই পিতামাতার অনুগত নয়। ছাত্রলীগ কর্মীরা অনুগত আওয়ামীলীগ নেতাদের অনুগত। নেতারা তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে ছাত্রলীগ যুবলীগ কর্মীদের। আর এসব নেতাদের আশ্রয় -পশ্রয় দিচ্ছে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের মন্ত্রী এমপিরা। সরকারের সীমাহীন দুর্নীতির চিত্র আজ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। শিক্ষা, চিকিৎসা ,স্বাস্থ্য ,অর্থনীতি সবক্ষেত্রে হরিলুট যার তালিকা কাগজ কলমে ধরে না। প্রশাসনিক লেভেলেও দুর্নীতি- অনিয়ম চরম পর্যায়ে। মানুষের জান মালের নিরাপত্তা আমরা হারিয়েছি অনেক আগেই কিন্তু শেষ পর্যায়ে হারালাম মা-বোনদের ইজ্জতের নিরাপত্তা। যে রাষ্ট্র নারীর ইজ্জত রক্ষায় আহাজারি করছে সে রাষ্ট্রের অধিকর্তারা রাষ্ট্রের জন্য কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন ? মন্ত্রী।,এমপি, আমলাদের বউ-বোনদের তো কোনো নিরাপত্তার অজুহাত নেই কারন তাঁদের লালিত ছেলেরাই তো ধর্ষণে সেঞ্চুরি করছে তাই মন্ত্রী এমপিদের বউ-বোনদের নিরাপত্তা ১০০% . কিন্তু যে সাধারণ জনগণের ভোটে এমপি মন্ত্রী হলেন , যে সাধারণ নাগরিকদের টাকায় দেশ চলে ,আমলারা চলে তাঁদের জীবন ও ইজ্জতের কোনো নিৰাপত্তা নাই কেন ? বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করা হচ্চে চরম ভাবে তাই বিচার বিভাগ অসহায় তা না হলে ১৮০ দিনে যে বিছার কার্য সম্পাদন হওয়ার কথা সেটা সম্পন্ন হতে বছরের পর বছর লাগবে কেন ? বিচারহীনতার কারণে বেড়েই চলছে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ''নো অ্যাকশন নো রিঅ্যাকশন '' প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হচ্ছে। আজকে সরকার যদি সঠিক থাকতো ধর্ষণতো দূরের কথা মেয়েদের চোখের দিকেও তাকাতে পারতো না ছাত্রলীগ। বিচারকার্যে রাজনৈতিক প্রভাব, নৈতিকতা ও সামাজিক অবক্ষয়ও এর জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী । রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা কমিয়ে , এবং বিদেশী অর্থায়নে চলা এনজিও কর্মীদের জোরালো ও সোচ্ছার ভূমিকা পালন করতে হবে এসব অপরাধ ঠেকানোর জন্য ,প্রত্যেক মানবাধিকার কর্মীকে সরকারের বন্ধনা -ভজনা ত্যাগ করতে হবে। তবে সামাজিক দায়বদ্ধতা না এড়িয়ে প্রতিটি পরিবারের অভিভাবকদেরও দৃষ্টি দিতে হবে নিজের ছেলে সন্তানের প্রতি। পারিবারিকভাবে নাগরিক সতর্কতা একান্ত প্রয়োজন। ধর্ষণ যে কোনো সময় বা যে কোনো স্থানেই হউক না কেন তার মূল্য সমান , নির্দিষ্ট কোনো স্থানের , জেলার , শহরের ধর্ষণকে ভিন্ন গুরুত্ব দেবার প্রয়োজন নেই। নারীর সম্মান সবখানে -সবারই সমান। নোয়াখালী ও সিলেটের ধর্ষণে বিচার কঠোর হস্তে হবে বলে আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছেন -এরকম আবাল মার্কা কথা একদম ঠিক না -নোয়খালী আর সিলেটের ধর্ষণ কোনো আলাদা বিষয় নয় , অন্নান্য ধর্ষণ একই বিষয় , অপরাধ সমান। সব ধর্ষণের অপরাধীদের দ্রুত বিচার করুন। বিচার বিভাগকে স্বাধীন করে দিন ,আর ছাত্রলীগ -যুবলীগকে সামাল দিন তাহলেই দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে। আর না হয় আপনাদের সোনার ছেলেদের দ্বারা হঠাৎ দেখবেন আপনাদের মেয়ে -বোন-বউ ধর্ষিত হয়ে গেছে। আজ আন্তর্জাতিক গণ মাধ্যমে উঠে আসছে লোমহর্ষক গণধর্ষণের ঘটনা যা বাঙালি জাতির জন্য লজ্জা। ধর্ষণের প্রতিবাদে আজ সমস্ত জাতি ফুঁসে উঠেছে , মানুষের পিঠ আজ দেয়ালে আটকে গেছে , বাঙালি জাতি আবারো দেখাবে অন্যায়ের প্রতিবাদের ফসল কিভাবে আন্তে হয়। অন্যায়ের প্রতিবাদের ফসল আমাদের মাতৃভাষা , অন্যায়ের প্রতিবাদের ফসল আমাদের স্বাধীনতা। যে যেখানে আছে কালো অন্যায়ের প্রতিবাদ করে ছিনিয়ে আনতে হবে আরেকটি ফসল -বাঁচাতে হবে আমার বোনের ইজ্জত, আনতে আমার মা বোনদের ইজ্জতের নিরাপত্তা পতাকা . তাই কালো পতাকা মিছিল হবে -ঘরে ঘরে উঠুক কালো পতাকা , আজ বিজয়ের পতাকার সাথে থাকবে কালোপতাকা উড্ডীয়ম্যান। ধর্ষকদের দ্রুত বিচার না হওয়া পর্যন্ত সাধারন ছাত্র- জনতা চালাবে কালো পতাকা মিছিল।
লেখক : আরিফ মাহফুজ , সাংবাদিক-কলামিষ্ট , যুক্তরাজ্য থেকে।
0 coment rios: