কামাল হোসেন, সুনামগঞ্জ : হুমকির মুখে তাহিরপুরের লাল শাপলার বিকি বিল: গরু মহিষের খাদ্য হিসেবে স্থানীয় কৃষকরা এখন ব্যবহার করছে বিকি বিলের শাপলার ডাটা।
গত কয়েক মাস যাবৎ স্থানীয় কৃষকরা অবাধে গোখাদয়ার যোগান হিসেবে বিকি বিলের লাল শাপলা ডাটা কেটে ব্যবহার করার কারণে এখন বিনষ্টের মুখে অপরূ সৌন্দর্যের গালিচার খ্যাত তাহিরপুরের নতুন পর্যটন স্পষ্ট লাল শাপলার বিকি বিল।
গতকাল শনিবার দুপুর সরেজমিনে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের খাসতাল গ্রামের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত বিকির বিলে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে বিলের সৌন্দর্য বিনষ্টের কথা জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বিলে গত বছর যে পরিমাণ শাপলা ফুটতো, এ বছর তার আর দেখা মিলছে না। গরু আর মহিষের খাবারের জন্য অবাধে শাপলার ডাটা তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দ্রুত এই সম্ভাবনাময় লাল শাপলার এ বিলটিকে রক্ষায় প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণেরও জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ।
জানাযায়, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ গত বছরের ১২ অক্টোবর সকালে পরিদর্শনে এসে পযর্টন স্পষ্ট হিসাবে তাহিরপুর উপজেলাধীন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ টাঙ্গুয়ার হাওর, নয়নাভীরাম নিলাদ্রী ডিসি পার্ক, শহীদ সিরাজ লেক, বারেকের টিলা, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান, প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন হলহলিয়া জমিদার বাড়ির পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিকভাবে একটি সাইনবোর্ড টানিয়ে লাল শাপলার বিকি বিলটি উদ্বোধন পর্যটন হিসাবে নতুন মাত্রাযোগ করেন।
এরপর বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার সাংবাদিকগন বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে লাল শাপলার বিকি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন। সাংবাদিকদের সংবাদ প্রকাশ পর থেকেই দেশ বিদেশের পর্যটকদের নজরে আসে লাল শাপলার বিকি বিল।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কাশতাল এলাকায় অবস্থিত লাল শাপলার বিকিবিলটি হলহলিয়ার চক ও দিঘলবাঁক মৌজার প্রায় ১৪.৯৫ একর জায়গা নিয়ে গঠিত। এর উত্তরে নয়নাভিরাম ভারতের মেঘালয় পাহাড়।
জানাযায়,গত এক যুগ ধরে এ বিকি বিলে সামান্য ফুল ফুটতো, কিন্তু ৪/৫ বছর ধরে পুরো হাওরে লাল শাপলা ফুটে প্রকৃতির এক অপরুপ সৌন্দর্য ধারণ করে। দেখলে মনে হয় কে যেন আপনাকে স্বাগত জানানোর জন্য লাল গালিচায় মোড়ায়ে রেখেছে। যতদুর চোখ যায় শুধু লাল আর লাল।
কিন্তু এ বছর বিকি বিলের এমন সৌন্দর্য নেই বললেই চলে। সাম্প্রতিক গত কয়েক দফা বন্যায় একদিকে বিলের সৌন্দযের্র উপড় প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে ভয়ে যাওয়া কয়েক দফা বন্যায় এ অঞ্চলের কৃষকদের গোখাদ্য সংকটের কারণে বর্তমনে পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের লোকজন অবাধে শাপলার ডাটা উপড়ে গরু মহিষের খাদ্যের জন্য বাড়ি নিয়ে গোখাদ্য হিসাবে ব্যবহার করছে। বর্তমানে যা কিছ সৌন্দর্য অবশিষ্ট রয়েছে তাও এখন বিনষ্টের পথে ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিকি বিল থেকে স্থানীয়রা লাল শাপলার ডাটা কেটে নৌকা বোঝাই করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে , জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক এ প্রতিবেদককে জানান, এ অঞ্চলের কৃষকেরা তাদের গরু, মহিষকে খড়ের পরিবর্তে বিলের এ শাপলার ডাটা কেটে নিয়ে খাওয়াচ্ছেন।
আমবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা বাংলাদেশ কৃষকলীগ বড়দল উত্তর ইউনিয়ন শাখার আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন দুলাল বলেন, গত বছর যেখানে প্রতিদিন ওই শতশত পর্যটক লাল শাপলার বিকি বিল দেখতে আসতো কিন্তু এবছর এই বিল কেউ আর দেখতে আসবেনা। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন,
অবাধে লোকজন শাপলার ডাটা কেটে নৌকা ভরে নিয়ে যাচ্ছে । বাধা দিলেও কেউ শুনছে না। বিলের যে সৌন্দর্য ছিল সে পরিবেশটা এখন আর নেই বললেই চলে।
এ বিষয়ে বড়দল উত্তর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. মাসুক মিয়া একই অভিযোগ , তিনিও জানান স্থানীয় এলাকাবাসী এই নয়নাভিরাম আপরূ সৌন্দর্যের লীলাভূমি দৃষ্টিনন্দন লাল শাপলার বিকি বিল থেকে শাপলার ডাটা উপড়ে যে যার মতো করে নিয়ে গরু মহিষকে খাওয়ানো ফেলে এর সৌন্দর্য প্রায় ধ্বংসের পথে। থানীয় লোকজনের সাথে লাল শাপলার বিকি বিলের সৌন্দর্য উদ্ধারে তিনিও দ্রুত প্রশাসনের সুদৃষ্টি কাম করছেন।
এ নিয়ে বড়দল উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আবুল কাশেম জানান, কয়েক দফা বন্যায় বিলের সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়েছে আর যা কিছু অবশিষ্ট রয়েছে তা বর্তমানে কৌশল করেই বিলের অাশপাশের গ্রামের মানুষ বিলের এ শাপলার ডাটা কেটে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে যার মতো বাড়ি নিয়ে গিয়ে গরু মহিষের খাওয়াচ্ছে ।
এর সৌন্দর্য রক্ষা করে দেশ বিদেশে এ বিলকে দৃষ্টিনন্দন পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় যেন কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
এ প্রসঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ দৈনিক জবাবদিহিকে জানান, গরু মহিষের খাবারের যোগান হিসেবে বিকি বিলের লাল শাপলার ডাটা উপড়ে গোখাদ্য হিসাবে ব্যবহার করে এর সৌন্দর্য বিনষ্ট করা হচ্ছে তা আমি জানতে পেরেছি। বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। এই পর্যটন স্পষ্ট লাল শাপলার বিকি বিলের সৌন্দর্য রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
0 coment rios: