দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি
দোয়ারাবাজার উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আহমদের বর্বরতায় পঙ্গু হয়েছেন দিনমজুর। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার পান্ডারগাঁও ইউনিয়নে। রইছপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের পুত্র আহত সমশের আলী বাদি হয়ে গত ১৭ আগস্ট সুনামগঞ্জ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে দোয়ারাবাজার থানাকে মামলা রেকর্ড করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। জানা যায়, গত ১ আগস্ট ঈদের দিন রাতে গাজীনগর গ্রামের মসজিদের ব্যাটারি চুরির অপবাদ দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় সমসের আলী (৩০) নামের এক যুবককে ২ থেকে আড়াই শ’ বেত্রাঘাত করেন পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ। মারধরের এক পর্যায়ে সমসের আলীর বাম হাতের কবজি ভেঙ্গে যায়। এরপর চেয়ারম্যান সমসের আলী কে বেঁধে নিয়ে আসেন বাসায় (ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে)। চলে আবারও বেত্রাঘাত। সারারাত আটকে রাখা বাথরুমের ভেতরে। পরের দিন সকালে সমসের আলী কে ছেড়ে দেন চেয়ারম্যান। পরিবারের লোকজন সমসের আলীকে উদ্ধার করে দোয়ারাবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। তিনদিন পর তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসকরা।গত ১৭ আগস্ট মারধরের অভিযোগে চেয়ারম্যান সহ ২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা তরেন সমসের আলী। মামলাটি দোয়ারাবাজার থানাকে আমলে নিয়ে রেকর্ড করার জন্য আদেশ প্রদান করেন আদালত।
মামলার বাদি সমসের আলী জানান, যে দিন আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্রাম গাজীনগরের মসজিদের ব্যাটারী চুরি হয় সেদিন আমি ভোলাগঞ্জে কাজে ছিলাম। ঈদের দিন চেয়ারম্যান গ্রামের লোকজন পাঠিয়ে আমাকে মসজিদে আসার জন্য বলেন। আমি আসার পর চেয়ারম্যান নিজেই রশি দিয়া হাত বেঁধে ফেলেন। পরে তিনি ২ আড়াই শ’ বার বেত মারেন আমাকে। যখন আমার একটা হাত ভেঙ্গে যায় তখন আমি চিৎকার দিয়া বলতেছি আমারে আর মাইরেন না আমি মরে যাব। এরপরও আমাক বেদম মারতে থাকেন চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যানের বাসায় নিয়ে দরজা বন্ধ করে আরেক বার মেরে আমাকে বাথরুমের ভেতরে সারা রাতা বন্দি করে রাখেন। আমার হাতের ব্যাথা সহ্য করতে পারছিলাম না। কান্নাকাটি করলে তিনি আমার মুখে চাপ দিয়ে ধরে থাকেন। যেন আমি কান্নাকাটি করতে না পারি। খাবার পানি চাইলে চেয়ারমান বলেন, প্রশ্রাব করে ভেয়ে নে, পানি পাবি না। আমাকে সারা রাত একটু পানি খেতেও দেয়া হয়নি। আমার অবস্থা খারাপ দেখে সকালে চেয়ারম্যান বাথরুম থেকে বের করে ছেড়ে দেন।
ভোলাগঞ্জে সমসের আলীর সাথে দিন মজুরের কাজে থাকা গাজীনগর গ্রামে তফুর আলী বলেন, যেদিন আমাদের গ্রামের মসজিদের ব্যাটারী চুরি হয়েছিল সেইদিন আমরা একসাথে কাজে ছিলাম।
পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ বলেন, সে আগে থেকেই চুরি করত। সে কারণে তাকে গ্রামের লোকজন ডেকে এনে জিজ্ঞেস করেছিলাম। আমাদের গ্রামের লোকজন সমসের আলীকে মারধর করতে চাইছিলেন, আমি মারতে দেইনি। আমি কয়েকটা চড়থাপ্পড় মরছি। রাতে ছেড়ে দেইনি কারণ পরিবারের লোকজন যদি গুম মামলা করে সেজন্য।
এ ব্যাপারে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া সুলতানা বলেন, যদি সে চুরি করেই থাকে তাহলে তাকে এভাবে মারতে পারেন না চেয়ারম্যান। আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না। চুরি করলে তাকে আইনের হাতে তুলে দিতে পারতেন। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
0 coment rios: