Tuesday, 18 August 2020

জামালগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প : Sunamganj Live

 

মো. ওয়ালী উল্লাহ সরকার, জামালগঞ্জ ::
কালের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে জামালগঞ্জ উপজেলার মৃৎশিল্প। বিভিন্ন সমস্যার কারণে আজ সঙ্কটের মুখে এই শিল্প। সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলায় প্রায় শত বছরের ঐতিহ্য বহন করা বেহেলী ইউনিয়নের বদরপুর গ্রামের মৎশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। ডিজিটাল যুগে পদার্পণ করায় মেলামাইন ও প্লাস্টিকের তৈরি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে মাটির তৈরি মৃৎশিল্পীদের সাংসারিক বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার্য বস্তু।

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, প্রযুক্তি ও উন্নয়নে নতুন নতুন শিল্প সামগ্রীর প্রসারের কারণে বাজার অনুকূলে না থাকায় এই শিল্প আজ হুমকির মুখে। একদিকে উন্নত প্রযুক্তি, মেলামাইন সামগ্রীর সাথে প্রতিযোগিতা, অন্যদিকে করোনার লগডাউনের কারণে বাংলা নববর্ষের মেলা, পণতীর্থ মেলা না হওয়ায় বিক্রি করতে পারেননি তাদের তৈরি খেলনা ও তৈজসপত্র। তাই প্রতিটি ঘরে ঘরে কার্টুন ভর্তি করে রেখে দেওয়া হয়েছে তাদের কষ্টার্জিত তৈরি আসবাবপত্র।

উপজেলার বদরপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এই গ্রামের অধিকাংশ লোকই পাল সম্প্রদায়ের। একসময় এই গ্রামের কয়েকশ’ পরিবার মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত ছিল। আধুনিকতার ছুঁয়া ও কালের পরিক্রমায় এখন মাত্র শতাধিক পরিবার তাদের পূর্ব পুরুষদের ঐতিহ্যবাহী পেশা অনেক কষ্টের মাঝেও ধরে রেখেছেন। বর্তমানে তাদের অবস্থা খুবই নাজুক।

বদরপুর গ্রামের মৃৎশিল্পী পুষ্প রাণী পাল, আরতি রানী পাল, সবিতা রানী পাল, অনামিকা পাল, অখিল চন্দ্র পাল, আশা রানী পাল, জিতেন্দ্র চন্দ্র পাল, সঞ্চিতা রানী পাল জানিয়েছেন, একসময় মাটির তৈরি হাড়িপাতিল, কলসি, রঙিন ফুলদানি, ফুলের টব, হাতি-ঘোড়া, নানা রঙের পুতুল ও বিভিন্ন সামগ্রী আমরা প্রতিটি বাড়িতে তৈরি করতাম। আর পুরুষরা বিভিন্ন হাটবাজার, মেলা ও বিভিন্ন পূজায় তা বিক্রি করতেন। তাতে আমরা অনেক লাভবান হতাম। তখন সংসারের চাহিদা মেটানো সম্ভব হতো। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু বর্তমানে প্লাস্টিক মেলামাইন ও অ্যালুমিনিয়ামের চাপে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের স্বপ্ন। তার ওপর মড়ার ওপর খারার ঘা হিসেবে করোনার লকডাউনে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের আয় নেই বললেই চলে। নিদারুণ কষ্টে চলছে দিনকাল। এই পরিস্থিতিতে পাল সম্প্রদায় পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই গ্রামের মৃৎশিল্পী পুষ্প রানী পাল বলেন, এই পেশায় নেই কোনো সরকারি সহায়তা। ব্যাংক ঋণ বা অন্য কোনো সহযোগিতা। তাই বাধ্য হয়েই ঘুটিয়ে নিতে হচ্ছে আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যবা পেশা। গ্রামের অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
মৃৎশিল্পী জিতেন্দ্র চন্দ্র পাল বলেন, বর্তমানে মাটির দাম, লাকড়ি, রঙ ও আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় তৈরিতে খরচ অনেকটা বেড়ে গেছে। আমরা এখন এই পেশা ধরে রাখতে পারব কি না সংশয়ে আছি।

তিনি আরও জানান, বিসিক ব্যাংক বা অন্যকোনো সংস্থা যদি স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে সহযোগিতায় এগিয়ে আসত তাহলে বাপদাদার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প ধরে রাখা সম্ভব। নতুবা আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাবে আমাদের এই পেশা।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: